আজব সব জীবগুলি - ২ (জল মাকড়শা)
আমার আগের লেখাটিতে অদ্ভুত এক আর্চার ফিসের কথা লিখেছিলাম। আর এপর্বে অদ্ভুত এক দাবী নিয়ে হাজির হতে চাই।
আচ্ছা বলুনতো ডুবুরীরা পানির নিচে শ্বাস নেয়ে কিভাবে? এই আধুনিক যুগে ডিসকভারি চ্যানেল দেখে দেখে এর উত্তর কারও কাছে আর অজানা নয়। তারা অক্সিজেন ট্যাংক ব্যাবহার করে। কিন্তু অক্সিজেন ট্যাংক আবিস্কারের আগে কি মানুষ পানির নিচে ডুব দিতো না?
অবশ্যই দিতো। এজন্য ব্যবহার করা হতো ডাইভিং বেল।
ডাইভিং বেল কিভাবে কাজ করে? খুব সহজ। পানিতে নামার আগে এটিকে উল্টো করে খোলা দিকটি পানির নিচে খাড়া ভাবে নামানো হতো। পানির চাপের কারণে বাতাস ঐ বেল এর মধ্যে আটকা পড়ে যেতো। একজন ডুবুরী একটু ডুব দিয়ে ওটার নিচে ঢুকে যেতেন। ডাইভিং বেলের ভেতরে আটকে পড়া বাতাসের সাহায্যে অতি সহজেই পানির নিচে নিঃশ্বাস নেয়ে যতো। দরকার হলে একবার দম নিয়ে বেল থেকে বের হয়ে ডুব সাতার দিয়ে কিছু কাজ করে আবার ডাইভিং বেল এর ভেতর এসে দম নিয়ে যেতে পারতেন।
শুধু একজনই নয়, প্রয়োজনে একাধিক মানুষ ডাইভিং বেল ব্যবহার করে পানির নিচে বেশ কিছুক্ষন সাচ্ছন্দে কাটিয়ে আসতে পারতেন।
অবশ্য ডাইভিং বেল যে শুধু প্রাচীনকালেই ব্যবহার হতো এটা ঠিক নয়। এখনও ব্যবহার হয়। খালি প্রযুক্তির ব্যবহারে ডাইভিং বেল এর উন্নতি ঘটেছে এই আরকি।
এবার আসা যাক আমার অদ্ভুত দাবীটি নিয়ে। আমি যদি বলি মানুষ এই ডাইভিং বেল আবিষ্কার করার অনেক আগেই প্রানীজগতে এই ডাইভিং বেল এর প্রচলন ছিলো, আপনারা কি বিশ্বাস করবেন?
অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি। মানুষ এটা আবিষ্কার করেছে ১৫ অথবা ১৬ শতকের দিকে । কিন্তু জল-মাকড়শারা (Argyroneta aquatica) ডাইভিং বেল ব্যবহার করছে তারও আগে থেকে।
তারা বুঝে গিয়েছিলো পানির নিচে সংসার করতে হলে বাতাসকে পানির নিচে আটকাতে হবে। ওরা বাতাসকে আটকায় কিভাবে জানেন? পানির উপরিতলে এসে পিছনের পা এবং পেটের ভাঁজে কায়দা করে একটি বাতাসের বুদবুদ আটকে নেয়। কিন্তু বেশি গভীরে ডুব দেয়না। কারন যত বেশি পানির নিচে যাবে বুদবুদের উর্ধমূখী চাপও ততবেশি হবে। তাই সাধারনত পানির উপরিতলের ঠিক নিচেই এদের বাসা থাকে।
চিন্তা নেই , এরা মাছ-টাছ ধরে খায়না। সাধারনত জলজ উদ্ভিদের পাতায় আটকে থাকে অতি ক্ষুদ্র পোকামাকড় খেয়েই এরা বাঁচে। দরকার হলে বুদবুদ থেকে অক্সিজেন নিয়ে নেয়। বুদবুদ ফুরিয়ে গেলে আবার পানির উপরিতল থেকে আরেকটা বুদবুদ তৈরি করে ডুব দেয়।
দেখলেনতো এরা প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের কতো আগে থেকেই করা শুরু করেছে?
গল্পটি কি তাহলে এখানেই শেষ?
উহু। কারন শুধু বুদবুদ তৈরি করেই ওরা থেমে থাকেনি। বংশ রক্ষার জন্য ওরা আরেকধাপ এগিয়ে গেলো। পানির নিচে বাসা বানাতে শুরু করলো!!
বাসাটা দেখতে কিরকম? ঠিক উল্টো করে রাখা গ্লাসের মতন।
গাছের লতার সাথে এমন ভাবে আটকানো থাকে যেনো উল্টে যেতে না পারে। বাবা-মাকড়শা আর মা-মাকড়শা মিলে প্রথমে এরকম একটি বাসা বানায়। তারপর দুজনে মিলে পানির উপর থেকে বুদবুদ নিয়ে বাসার ভেতর ছাড়তে থাকে।
বাসার ভেতর বাতাসপূর্ণ হয়ে গেলে এরপর দুজন মিলে বাতাসের পরিমান মেপে দেখে।যদি মনে করে বাসার ভেতর যথেষ্ট বাতাস জমেছে, তাহলে দুজনে পানির নিচে বাসার ভেতর বাসর জমায়। মা-মাকড়সা সেইখানেই ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ছানাগুলি ছোট থাকা অবস্থায় বাবা-মাকড়শা আর মা-মাকড়শা মিলে লক্ষ্য রাখে বাসার ভেতর অক্সিজেনের পরিমান ঠিক আছে কিনা। একটু বড় হবার পর ছানাগুলি নিজে নিজেই বুদবুদ তৈরি করে পানির নিচে নিয়ে আসতে পারে।
Underwater kingdom মানুষের সপ্ন, কিন্তু দেখুন এরা অনেক আগে থেকেই সেটা তৈরি করে বসে আছে।
পূর্বে প্রকাশিতঃ সচলায়তন
তথ্যসূত্রঃ না-মানুষী বিশ্বকোষ- নারায়ণ সান্যাল